✏ অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৪০, ২৪ মে ২০২৫
![]() |
ছবি: অনলাইন |
দক্ষিণ চীনের ফুজিয়ান প্রদেশে এক প্রাচীন ডাইনোসরের ডিম ঘিরে বিজ্ঞানীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। কারণ, এই ডিমের মধ্যে মিলেছে একটি অত্যন্ত সুসংরক্ষিত ডাইনোসরের ভ্রূণ—যাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘বেবি ইংলিয়াং’। গবেষকদের ধারণা, ভ্রূণটির বয়স প্রায় ৭ কোটি বছর।
এই ডিমটি সংরক্ষিত ছিল চীনের নানআন শহরের ইংলিয়াং স্টোন ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের সংগ্রহে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ডিমটি অবহেলায় পড়ে ছিল একটি গুদামে। ২০১৫ সালে হঠাৎ ডিমের গায়ে দেখা দেওয়া একটি ফাটল থেকে ভিতরের হাড় নজরে পড়ে এক কর্মীর। সেখান থেকেই শুরু হয় বিস্ময়কর এক বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই ভ্রূণটি ‘ওভির্যাপটরোসর’ নামের এক প্রজাতির ডাইনোসরের। এরা পাখির ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং তাদের অনেক আচরণও পাখিদের মতোই ছিল বলে মনে করা হয়।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো ভ্রূণের ভঙ্গিমা—যা আশ্চর্যজনকভাবে আজকের পাখির জন্মের পূর্বের “টাকিং পজিশনের” মতো। অর্থাৎ, পাখির ছানারা ডিম ফোটার আগে যেভাবে গুটিয়ে থাকে, ঠিক তেমনভাবেই ছিল এই ডাইনোসর শিশুটি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর থেকে প্রমাণ মেলে যে, পাখিদের এই স্বভাব হয়তো তাদের ডাইনোসর পূর্বপুরুষদের থেকেই এসেছে।
ইউনিভার্সিটি অফ বার্মিংহ্যামের প্যালিওনটোলজিস্ট ওয়াইসাম মা বলেন, “ভ্রূণটির অবস্থান ও সংরক্ষণের মান দেখে আমরা অভিভূত। এটি এতটাই স্পষ্ট ও সম্পূর্ণ যে আমরা সহজেই এর আচরণ বিশ্লেষণ করতে পারছি।”
ভ্রূণটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৭ সেন্টিমিটার এবং ডিমটির দৈর্ঘ্য ছিল ১৭ সেন্টিমিটার। গবেষণায় উঠে এসেছে, সঠিকভাবে "টাকিং পজিশন" না নিলে জন্মের আগে ভ্রূণের মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা বর্তমান পাখিদের মধ্যেও দেখা যায়।
এত নিখুঁতভাবে সংরক্ষিত ডাইনোসর ভ্রূণ পাওয়া অত্যন্ত বিরল। গবেষকদের ধারণা, ডিমটি পাড়া হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই কাদা বা বালুর নিচে চাপা পড়ে যাওয়াতেই এত দীর্ঘ সময়েও এটি অক্ষত থেকেছে।
এটি প্রথমবারের মতো এমন এক অ-অ্যাভিয়ান ডাইনোসরের প্রমাণ দিল, যার মধ্যে আধুনিক পাখির আচরণের ছাপ পাওয়া গেল। ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবরার বিজ্ঞানী স্টিভ ব্রুসাটে বলেন, “ভেতরে থাকা ভ্রূণটি যেন একটি ছোট পাখি ডিমের ভিতরে গুটিয়ে আছে—এটি প্রমাণ করে, আজকের পাখির অনেক বৈশিষ্ট্য এসেছে ডাইনোসরদের থেকে।”
যদিও একটি মাত্র নমুনা থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত টানা সম্ভব নয়, তবুও বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি প্যালিওনটোলজির জগতে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার।
বর্তমানে ‘বেবি ইংলিয়াং’ ইংলিয়াং স্টোন ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে প্রদর্শনের জন্য প্রস্তুত এবং আরও গবেষণার জন্য রাখা হয়েছে। এই আবিষ্কার শুধুমাত্র অতীতের রহস্য উন্মোচন করছে না, বরং ভবিষ্যতের গবেষণারও নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।
0 মন্তব্যসমূহ