Header Ads Widget

পাংশায় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও বসতবাড়ি ভাঙচুর: আহত ১১

 ✏মো. আকাশ মাহমুদ, পাংশা

প্রকাশিত: ৯:২৭, ১৮ জুন ২০২৫



রাজবাড়ীর পাংশায় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও বসতবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসময় উভয় পক্ষের ১১ জন আহত হয়েছে।


মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিকেলে উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের কশবামাজাইল গ্রামের আইয়ুব মাস্টারের মোড়ে এই সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

আহতদের পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে তাদের মধ্যে ৪ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। বাকিরা পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।


স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে জানা যায়, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশীদ গ্রুপ ও রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক এমপি নাসিরুল হক সাবু গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। মঙ্গলবার (১৭ জুন) এই দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায় এবং উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দুই পক্ষের লোকজন অগ্নিয়াস্ত্র সহ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালায়।


সংঘর্ষে হারুন গ্রুপের পক্ষে নেতৃত্ব দেন কসবামাজাইল ইউনিয়নের সুবর্ণখোলা গ্রামের মৃত আমির আলী খা'র ছেলে মোসলেম খা, দীঘলহাট গ্রামের মৃত আলী মন্ডলের ছেলে বক্কার মন্ডল ও মৃত আফজাল মন্ডল এর ছেলে হুজুর আলী।এসময় তাদের সঙ্গে শতাধিক সমর্থক ছিলো।


অপরদিকে, সাবু গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন মৃত শামসুল হুদার ছেলে নাজমুল হুদা, মৃত আলতাব হোসেনের ছেলে আজমল হোসেন বাবু, আমিরুল ও আকাইয়ের ছেলে তুল্লা। তাদের সাথে আনুমানিক দের শতাধিক সমর্থক ছিলো।


সংঘর্ষে হারুন গ্রুপের আহতরা হলেন, দীঘলহাট গ্রামের মোঃ চিনির উদ্দিন (৫৫), আশরাফুল (৪০), মোঃ শাকিল মন্ডল (২০), নজরুল ইসলাম (৪৫), আনোয়ার হোসেন (৪০), তুহিন (১৭) ও বিপুল মন্ডল (৪০)। এদের মধ্যে আনোয়ার ও তুহিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বাকিরা পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।


সাবু গ্রুপের আহতরা হলেন, কসবামাজাইল গ্রামের আজমল হোসেন বাবু (৫৫), নটাভাঙ্গা গ্রামের লুৎফর খান (৭৫), সলুয়া গ্রামের ইকবাল মল্লিক (৫০) ও সলুয়া গ্রামের হযরত আলী (৩৫)। এদের মধ্যে লুৎফর ও ইকবালের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। 


সংঘর্ষের সময় হারুন গ্রুপের লোকজন সাবু গ্রুপ সমর্থিত কসবামাজাইল গ্রামের আজমল হোসেন বাবু, গোকুল মন্ডল, সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার ফারুক মিয়া, বিপুল মিয়া, বিল্লাল হোসেন মিয়া, জামাল মন্ডল ও কুদ্দুস মন্ডলসহ ডেমনামারা গ্রামে ২টি বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। 


এ বিষয়ে হারুন গ্রুপের অন্যতম সদস্য বক্কার মণ্ডল বলেন, “ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের দুই গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বিরোধ চলে আসছে। মঙ্গলবার একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আমরা তাদের জানিয়েছিলাম, আজকের দিনে কোনো ধরনের প্রোগ্রাম না করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা জানায়, যেকোনো মূল্যে তারা অনুষ্ঠান করবে। এরপর নাজমুল, আমিরুল, বাবু ও তুল্লার নেতৃত্বে একটি দল ঢাল-সড়কি নিয়ে নটাভাঙ্গা থেকে কসবামাজাইলের দিকে অগ্রসর হলে আমাদের পক্ষের লোকজন বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।”


অপরপক্ষে হামলায় নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত নাজমুল হুদা বলেন, "আমরা কোনো ধরনের সংঘর্ষে যেতে চাইনি। আমাদের পূর্বনির্ধারিত একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল, যা শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু হারুন গ্রুপ পরিকল্পিতভাবে আমাদের অনুষ্ঠানে বাধা দিতে আসে এবং প্রথমে তারা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র দ্বারা সজ্জিত হয়ে আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। আমরা আত্মরক্ষার্থে প্রতিরোধ করি মাত্র। আমাদের পক্ষের কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন, যার মধ্যে লুৎফর খান ও ইকবাল মল্লিককে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে। তারা আমাদের পক্ষের কয়েকজনের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। এ সংঘর্ষে আমাদের কোন দায় নেই। আমাদের পক্ষ থেকে সাইফুল ইসলাম মিয়া বিপুল বাদী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত কামনা করছি।" 


থানায় অভিযোগকারী সাইফুল ইসলাম বিপুল মিয়া বলেন, "আমাদের পূর্ব ঘোষিত মিটিং ছিলো। সেখানে যোগ দিতে আমরা আমাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সেখানে যাচ্ছিলাম। হারুন গ্রুপের লোকজন অতর্কিতভাবে আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। পরে তারা আামাদের বাড়িঘরেও হামলা চালায়। এসময় তারা ৮-৯ টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। আমি এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছি।"


এ ঘটনার পর এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। পাংশা মডেল থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।


পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, "কসবামাজাইলে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে এমন সংবাদে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করার জন্য পুলিশ পাঠানো হয়। সেখানে উভয়পক্ষের উত্তেজনা বিরাজ করলে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ১১ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সাইফুল ইসলাম বিপুল মিয়া ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।"




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ