✏অনলাইন ডেস্ক
রাজবাড়ী সার্কেল | প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫, ২:৩০
দীর্ঘ দুই বছর পর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফের ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চিত করেছে, তিনটি আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা—আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (JICA)—থেকে প্রাপ্ত ঋণ সহায়তার অর্থেই মূলত এই রিজার্ভের উত্থান ঘটেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে এক সংবাদ বিবৃতিতে জানান, সম্প্রতি রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে আইএমএফের দুটি কিস্তিতে ১৩৪ কোটি ডলার, এডিবির ৯০ কোটি ডলার এবং জাইকার ঋণ সহায়তা। এতে বৃহস্পতিবার দিন শেষে মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার।
তবে আইএমএফের BPM6 (Balance of Payments Manual-6) হিসাব অনুযায়ী নিট রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ব্যবহারযোগ্য বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের হিসাবটি বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে না, তবে সূত্র বলছে, তা ২০ বিলিয়নের কাছাকাছি। এই রিজার্ভ দিয়ে বাংলাদেশ প্রায় সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহ করতে পারবে, যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৩ মাসের আমদানি ব্যয়ের রিজার্ভ থাকা জরুরি।
সরকার পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি
সরকার পরিবর্তনের পর বৈধ পথে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়াও রিজার্ভ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ কমেছে এবং ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। গত ১০ মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেনি—এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।
একই সঙ্গে ব্যাংক ও রাজস্ব খাত সংস্কার, বাজেট সহায়তা এবং ঋণ সহায়তা হিসেবে দেশের মোট ৫০০ কোটির বেশি ডলার প্রবেশ করেছে। সবমিলিয়ে রিজার্ভ এখন বাড়তির দিকে, যা ভবিষ্যতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
অতীতের চিত্র ও সংকট
২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। কিন্তু পরবর্তীকালে বৈশ্বিক মহামারি পরবর্তী আমদানি ব্যয়, টাকার অবমূল্যায়ন ও বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতে রিজার্ভ দ্রুত কমে যায়। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে অর্থপাচারের অভিযোগও উঠে আসে।
রিজার্ভ রক্ষায় বাংলাদেশ ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা চায়। চলতি হিসাবের ঘাটতি ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার উদ্দেশ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বর্তমানে ৩০ বিলিয়ন ডলারে রিজার্ভ পুনঃপ্রতিষ্ঠা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার একটি ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। তবে এই রিজার্ভ যে বেশিরভাগই ঋণ সহায়তার ওপর নির্ভরশীল, তা ভুলে গেলে চলবে না। কাঠামোগত সংস্কার, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক উন্নয়ন ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল রিজার্ভ বজায় রাখা সম্ভব হবে না—বিশেষজ্ঞদের এমনটাই মত।
0 মন্তব্যসমূহ