✏অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭:১১, ৮ জুন ২০২৫
বিশ্বব্যাপী রক্তের ঘাটতি ও গ্রুপ মিলানোর জটিলতা দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসা খাতে একটি বড় সমস্যা। এবার সেই সমস্যার সমাধানে আসছে যুগান্তকারী এক উদ্ভাবন—সব রক্ত গ্রুপে ব্যবহারযোগ্য কৃত্রিম রক্ত। জাপানের বিজ্ঞানীরা এ ধরনের একটি কৃত্রিম রক্ত তৈরি করেছেন, যা বর্তমানে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে রয়েছে এবং সফল হলে চিকিৎসা খাতে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারা মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হিরোমি সাকাই। তার গবেষক দল এমন এক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন, যার মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ দানকৃত রক্ত থেকে হিমোগ্লোবিন সংগ্রহ করে তা ভাইরাসমুক্ত ও স্থিতিশীলভাবে কৃত্রিম রক্তে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। বিশেষ একটি সুরক্ষিত আবরণে মোড়ানো এই হিমোগ্লোবিন কণা মানবদেহে লাল রক্তকণিকার কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম।
এই কৃত্রিম রক্তের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—এটি যেকোনো রক্ত গ্রুপে ব্যবহার করা যাবে। যেখানে সাধারণ রক্তের ক্ষেত্রে গ্রুপ মেলানো ও সংরক্ষণের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সেখানে এই উদ্ভাবিত রক্তের মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে। এটি বিশেষ করে দুর্ঘটনা, জরুরি অস্ত্রোপচার কিংবা যুদ্ধক্ষেত্রের মতো পরিস্থিতিতে ব্যাপক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
২০২৫ সালের মার্চ মাসে প্রথম ধাপে ১৬ জন সুস্থ স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে ১০০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার পরিমাণে কৃত্রিম রক্ত প্রয়োগ করা হয়। প্রাথমিক ফলাফল ইতিবাচক হলে ২০৩০ সালের মধ্যেই এটি বাস্তব চিকিৎসায় ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক সাকাই।
তিনি বলেন, “বর্তমানে কোনো নিরাপদ ও কার্যকর কৃত্রিম লাল রক্তকণিকা নেই। আমাদের লক্ষ্য সেই শূন্যস্থান পূরণ করা।”
এই খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে একে ‘নোবেল পুরস্কারযোগ্য’ আবিষ্কার হিসেবে অভিহিত করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, “মূল্য সাশ্রয়ী হলে এই আবিষ্কার চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী মাইলফলক হয়ে থাকবে।”
শুধু জাপানই নয়, যুক্তরাষ্ট্রেও কৃত্রিম রক্ত তৈরির চেষ্টা চলছে। ‘এরিথ্রোমার’ নামের একটি প্রকল্পে ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড পুরনো হিমোগ্লোবিন ব্যবহার করে কৃত্রিম রক্ত তৈরির কাজ করছে। এই প্রকল্পে মার্কিন প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডারপা (DARPA) ইতিমধ্যে ৪৬ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের উদ্ভাবন ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে রক্তের সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এবং একে চিকিৎসা খাতের ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
0 মন্তব্যসমূহ