✏অনলাইন ডেস্ক
রাজবাড়ী সার্কেল | প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ৭:১০
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আবারও রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) খান ইউনিস এলাকায় হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ৭ সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই ইসরায়েলি ৬০৫তম কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নের সদস্য ছিলেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বুধবার (২৫ জুন) জানানো হয়, ওইদিন সেনারা একটি সামরিক যান নিয়ে টহল দিচ্ছিলেন। এ সময় হামাস যোদ্ধারা পূর্ব-স্থাপন করা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়, ফলে গাড়িটি আগুন ধরে পুড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই সাত সেনার মৃত্যু হয়। ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে হামাস। ইসরায়েলি বাহিনী এটিকে গত কয়েক মাসের মধ্যে অন্যতম বড় ক্ষয়ক্ষতি হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেন, “ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধারকারী দল ও হেলিকপ্টার পাঠানো হয়। তবে সেনাদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি।” তিনি আরও জানান, নিহত সেনারা ওই এলাকায় হামাসের সুড়ঙ্গ ও অবস্থান লক্ষ্য করে অভিযান পরিচালনা করছিলেন।
৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭৯ জনে।
অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৬ হাজার ছাড়িয়েছে, যার অধিকাংশই নারী ও শিশুসহ বেসামরিক নাগরিক।
একইদিন গাজায় খাদ্য সহায়তা নিতে আসা আরও অন্তত ৪০ জন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই হামলা ঘটে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম চলাকালে। ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
জাতিসংঘসহ একাধিক মানবাধিকার সংস্থা অভিযোগ করেছে, জিএইচএফ-এর কার্যক্রম মানবিক নীতিমালার পরিপন্থি এবং এই ধরনের তৎপরতায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যস্থতায় মঙ্গলবার থেকে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও গাজায় তা প্রতিফলিত হয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমাদের ইরানে চালানো আঘাত গাজার যুদ্ধ আলোচনায় আমাদের শক্ত অবস্থান প্রদর্শন করেছে। আশা করছি, ভালো কিছু হবে।”
তবে ইসরায়েল সরকার এখনও গাজায় যুদ্ধ বন্ধের পক্ষপাতী নয়। দেশটির কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ জানিয়েছেন, “আরও দুই মাস সময় পেলেই হামাসকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করা সম্ভব।”
অন্যদিকে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরে যুদ্ধবিরতির দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। পার্লামেন্ট সদস্য মোশে গাফনি বলেছেন, “আমি বুঝতে পারছি না, আমরা এই যুদ্ধ কেন এখনো চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের একজন ট্রাম্পের মতো নেতা দরকার, যে এসে বলবে, ‘ঠিক আছে, এবার শেষ।’”
উল্লেখ্য, গাজায় এখনও প্রায় ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ৩০ জনের জীবিত থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ৬০ দিনের বিরতি, জীবিত জিম্মিদের অর্ধেক এবং মৃতদের দেহ ফিরিয়ে আনার কথা থাকলেও এখনো কোনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা যুদ্ধ এক ভয়াবহ মানবিক সংকটে রূপ নিয়েছে, যেখানে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু, ধ্বংস আর অনিশ্চয়তা। শান্তির পথে এখনো বহু বাধা রয়ে গেছে।
0 মন্তব্যসমূহ