✏ডাঃ রাজীব দে সরকার ||
প্রকাশিত: ১০:১৭, ১৬ জুন ২০২৫
কিভাবে হাসপাতালে এসে একটা হট্টগোল বাঁধানো যায়। বাণিজ্যের সাথে সেবার যুদ্ধে, আদিমকাল থেকেই বাণিজ্যই জিতেছে।
তবে গণমাধ্যমে যদি আরো সংবেদনশীল হতো, পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ হতো না। কিন্তু কতিপয় গণমাধ্যম অনলাইনে কোন প্রকার যাচাই-বাছাই বা সরেজমিনে তদন্ত ছাড়াই যখন একজন চিকিৎসকের বিশেষায়িত সেবাকে “ভুল চিকিৎসা” বলে নাগরিক দায়িত্ব পালন করেন, তখন এই সকল অসাধু সিন্ডিকেট আরো উৎসাহী হয়। আরো শক্তিশালী হয়। চিকিৎসকদের “গণশত্রু” বানাতে তাদের সুবিধা হয়।
যদি কখনো শোনেন হাসপাতাল এলাকার ফার্মেসীতে বা কোন ক্লিনিকের সস্তা আড্ডাখানায় সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিয়ে জমপেশ মুখরোচক আলোচনা হচ্ছে, ধরেই নিতে পারেন এই চিকিৎসকরা রোগীদের ভালোর জন্য কোন না কোন কাজ করছেন, যা এই বাণিজ্য সম্রাটদের স্বার্থে আঘাত হেনেছে। যে চিকিৎসক টেস্ট লিখেন না বা কম টেস্ট লিখবেন, তিনি কেনই বা এদের চোখে ভালো হবেন? যে চিকিৎসক মুখের উপর প্রশ্ন করে বসেন “ভাই সাথের রোগী আপনার কে হয়?” সেই চিকিৎসক তো অবশ্যই খারাপ। যে চিকিৎসক বিনা প্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক লিখলেন না, তার মতো খারাপ চিকিৎসক অত্র জেলায় আর একটিও নাই!!
তবে জেনে রাখুন, হাসপাতালে চিকিৎসক একা। বড্ড একা। তার সম্বল শুধু তার নলেজ আর স্কিল। এই নলেজ আর স্কিল অর্জন করতে তা বহু বিনিদ্র রজনী খরচ হয়েছে। এই নলেজ আর স্কিল তিনি অর্জন করেছেন আপনাদেরই জন্য। এই নলেজ আর স্কিল দিয়েই তিনি অজস্র রোগীকে সুস্থতার হাসি দিয়েছেন। মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন আপনারই কোন স্বজনকে।
কিন্তু চিকিৎসকের আর কোন সম্বল নাই। আর কোন অস্ত্র নাই। সে একা এবং অসহায়। একজন চিকিৎসকের মূল শক্তি তার রোগীরা। রোগীরা যদি দালালদের হাতে জিম্মি হয়ে পরেন, একই সাথে চিকিৎসকও জিম্মি হয়ে পরেন অসত্য প্রোপাগান্ডার কাছে।
সরকারী হাসপাতাল গুলোতে অনেক সমস্যা আছে, এটা সত্য কথা। কিন্তু এর দায় চিকিৎসকের না। তিনি এই অবস্থা তৈরী করেন নি।
বরং একজন ডাক্তার সেই ‘সৈনিক’, যিনি শত সীমাবদ্ধতার মাঝে থেকেও লড়াই করে চলেছেন। জরুরী বিভাগে তার বিশ্রাম নেই, তার আহারের সময় নাই, এক গ্লাস পানি খাওয়ার সময় নাই, প্রিয়জনের সাথে ১ মিনিট কথা বলার অবকাশ নাই, তিনি শুধু আপনার জন্যই সেখানে আছেন। তাই একজন চিকিৎসক আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধু। তাকে সময় দিন, ধৈর্য্য ধরে তাকে সহযোগিতা করুন। তিনি আপনার জন্য নিজের সর্বোচ্চটা করবেন। কারণ তিনি আর কিচ্ছু শিখেন নি। শুধু এই একটা কাজই শিখেছেন। আপনার বা আপনার প্রিয় মানুষটার সেবা করার দুর্লভ ও মহিমান্বিত এই কাজ। হাসপাতালে একজন চিকিৎসকের থেকে বেশি “আপন” আপনার আর কেউ নাই।
লেখক ঃ সার্জারী বিশেষজ্ঞ, শিশু রোগ চিকিৎসক ও সার্জন, কলামিস্ট।
1 মন্তব্যসমূহ
খুব ভালো লেগেছে
উত্তরমুছুন