কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার দক্ষিণ চরটেকি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকাডুবির ঘটনায় বড় বোন নীলা আক্তারের (১৮) মরদেহ উদ্ধারের ১৯ ঘণ্টা পর ছোট বোন নিখোঁজ ফারিয়া রহমান নীহার (৯) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার (১২ জুলাই) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে মরদেহটি ভেসে উঠলে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল সেটি উদ্ধার করে।
এর আগে শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেলে পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরটেকি বেড়িবাঁধ এলাকায় একটি ডিঙি নৌকায় করে ব্রহ্মপুত্র নদে ঘুরতে গেলে আকস্মিকভাবে নৌকাটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলেই বড় বোন কাশ্মীরা রহমান নীলার মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
নিহত দুই বোন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চৌদ্দশত ইউনিয়নের জালুয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহমান ও নীপা আক্তারের মেয়ে। ফারিয়া রহমান নীহা কটিয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও কাশ্মীরা রহমান নীলা গুরুদয়াল সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
এ ঘটনার পরপরই পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন, দক্ষিণ চরটেকি ব্রহ্মপুত্র নদের বেড়িবাঁধ এলাকায় সকল ধরনের নৌকা-স্পিডবোটের ওপর পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন রোধে দক্ষিণ চরটেকি এলাকায় নির্মিত হয়েছে একটি বাঁধ, যা বর্তমানে স্থানীয়দের কাছে একটি পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে পরিচিত। ঈদের ছুটিতে সেই স্থান দেখতে পরিবারসহ বেড়াতে যান আবদুর রহমান। ঘোরাঘুরির একপর্যায়ে তারা নদে নৌকায় ভ্রমণে যান, যেখানে ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। মুহূর্তেই হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি তৈরি হয় ঘটনাস্থলে।
ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকাডুবির ঘটনার পর স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে আবদুর রহমান ও তার স্ত্রী নীপা আক্তারকে জীবিত উদ্ধার করলেও বড় মেয়ে নীলাকে মৃত অবস্থায় পান। এ সময় ছোট মেয়ে ফারিয়া নদে নিখোঁজ ছিল। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালায়। পরদিন শনিবার সকাল থেকে আবারও অভিযান শুরু হয় এবং দুপুরে নীহার মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণ চরটেকি বেড়িবাঁধ এলাকায় নৌকায় ঘোরা শিশুসহ পর্যটকদের কাছে ছিল আনন্দের উৎস, যা মুহূর্তেই পরিণত হয় বিষাদে। এছাড়াও অনেকেই এ বিষয়ে অভিযোগও করেছেন- অদক্ষ নৌকার মাঝি ও নতুন যুক্ত হওয়া স্পিডবোটের বেপরোয়া চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন যদি সুষ্ঠু তদারকি করে, তাহলে ছোট বড় অনেক দুর্ঘটনায় কমে আসবে।
কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের অফিসার আব্দুল্লাহ খালিদ জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে নৌকাডুবির খবর পাওয়ার পরপরই আমরা ডুবুরি দল পাঠাই। অবশেষে শনিবার দুপুরে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন দুই বোনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, দক্ষিণ চরটেকি এলাকাটি এখন ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সুপরিচিত স্থানে রুপান্তরিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে লোক সমাগম বেশি হচ্ছে। এখানে নিরাপত্তার বিষয় আছে। এছাড়া নৌকা ও স্পিডবোট বেপরোয়া চলাচল করছে। যেহেতু এখানে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেহেতু আজকে থেকে দক্ষিণ চরটেকি এলাকায় সকল ধরনের নৌকা ও স্পিডবোট পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ