দচোখে কান্না, মুখে অসহায় আকুতি নিয়ে নিজের বাড়ির গেটের সামনে বসে ছিলেন এক বৃদ্ধা মা। বয়স সত্তরের কোঠায়। যার জীবনের শেষ প্রান্তে ছিল একটু শান্তি খোঁজার আশ্রয়, সেই স্বামীর গড়া বাড়ির গেটেই আজ তালা ঝুলে আছে। আর সেই তালা ঝুলিয়েছে কেউ নয়, তারই আদরের সন্তান।
সোমবার (১৪ জুলাই) এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেছে নওগাঁ শহরের কাজির মোড় এলাকায়। বৃদ্ধা বিলকিস আক্তার সকাল থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিজের বাড়ির ফ্ল্যাটে ঢোকার। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ। কারণ, তার একমাত্র ছেলে মোস্তাফিজুল ইসলাম সৌরভ বাড়ির লোহার গেটেই কাঁচি গেইট লাগিয়ে তালা ঝুলিয়ে রেখেছে।
‘আমি রোজা আছি। সকাল ১১টা থেকে গ্যারেজে বসে আছি। আমার নিজের বাড়ি, অথচ আমি ঢুকতে পারছি না!’ কথাগুলো বলার সময় চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছিলো পানি, কণ্ঠ ছিল কাঁপা।
৩০ বছর আগে বিলকিস আক্তারের স্বামী কাজির মোড় এলাকায় ১০ শতক জমির ওপর তৈরি করেন দুই তলা এই বাড়ি। স্বামীর মৃত্যুর পর শুরু হয় জমি নিয়ে বিরোধ। আইন অনুযায়ী, মা ও তিন সন্তান সমান অংশীদার হলেও, ছেলে সৌরভ চেয়েছিলো পুরো বাড়ি নিজের নামে লিখে নিতে। কিন্তু মা ও মেয়েরা তা মানতে রাজি হননি। তখন থেকেই শুরু হয় নির্যাতন ও অবহেলা।
বিলকিস বলেন, “স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই সৌরভ বদলে গেছে। বোনদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে, আমাকেও সহ্য করতে চায় না। আজকে বললো, ‘তুই দুই আনার মালিক, তুই গিয়ে পাথারে থাক।’ এটা কি সন্তানের মুখে মানায়?”
দীর্ঘদিন বড় মেয়ের বাড়িতে বসবাস করলেও মাঝে মাঝে নিজের বাড়িতে ফিরে আসতেন বিলকিস। আজ যখন তিনি বাড়িতে ফেরেন, তখন দেখতে পান দোতলার সিঁড়িতে ঝুলছে তালা। ছেলেকে ফোন দিলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘এই বাড়িতে তোর জায়গা নেই।’
বিলকিস আক্তারের বড় জামাতা ডা. আবুজার গাফফার বলেন, ‘আমার শ্যালক একাধিকবার শাশুড়িকে মারধর করেছে, মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালে আমার স্ত্রী ও তার বোন তাদের অংশ মায়ের নামে লিখে দেয়। এখন মায়ের নামে ৭০ শতাংশ মালিকানা থাকলেও তাকেই বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।’
ছেলে মোস্তাফিজুল ইসলাম অবশ্য তার আচরণকে যৌক্তিকতা দিতে গিয়ে বলেন, ‘মা আদালতের নির্দেশে বড় বোনের জিম্মায় আছেন। তিনি আমার জীবনের হুমকি। তাই তাকে ঢুকতে দিচ্ছি না।’
এসব বিষয়ে, মানবাধিকার কর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে বৃদ্ধার প্রতি মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ তোলেন।
সন্তান যখন আশ্রয় না হয়ে নির্যাতনের উৎস হয়ে দাঁড়ায়, তখন মা বলতে বাধ্য হন, ‘এমন দিন দেখতে হবে, কখনও কল্পনাও করিনি!’
0 মন্তব্যসমূহ