ফেনী জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৩০টিরও বেশি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, মঙ্গলবার রাত ১০টায় মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ১.৩৭ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যেখানে স্বাভাবিক বিপৎসীমা ১২.৫৫ মিটার, সেখানে পানি উঠেছে ১৩.৯২ মিটার পর্যন্ত। দিনভর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায় প্রায় ২২ ফুট ১০ ইঞ্চি।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত) দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ফেনীতেই—৪৪১ মিলিমিটার, যা চলতি বর্ষা মৌসুমের সর্বোচ্চ।
বাঁধ ভাঙনের বিস্তার
পরশুরামের জঙ্গলঘোনা, অলকা, শালধর, গদানগর, সাতকুচিয়া, বেড়াবাড়িয়া এবং ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুর, দেড়পড়া ও দৌলতপুর এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়। মুহুরী নদীর পাশাপাশি কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর তীব্র স্রোতের চাপেই এসব বাঁধ ভেঙে পড়ে। এতে হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বিদ্যুৎ ও শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত
ফেনী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্যমতে, অনেক এলাকায় বৈদ্যুতিক মিটার, সাবস্টেশন পানিতে ডুবে যাওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, ফুলগাজী উপজেলার উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে দুই উপজেলায় শতাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়েছে।
ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা, প্রস্তুত প্রশাসন
স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে সময়মতো বাঁধের দুর্বল অংশগুলো মেরামত না করায় এ ভোগান্তি তৈরি হয়েছে। চিথলিয়ার জাকিয়া আক্তার বলেন, "গত বছর বন্যায় সব হারিয়েছিলাম। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই আবার সব তলিয়ে গেল।"
মির্জানগরের রফিকুল ইসলাম বলেন, "প্রতি বছরই কিছু কর্মকর্তার দায়সারা মনোভাবের কারণে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।"
প্রশাসনের উদ্যোগ
পরশুরাম উপজেলার ইউএনও আরিফুর রহমান জানান, “বিভিন্ন পয়েন্টে নতুন করে বাঁধ ভাঙায় নতুন এলাকাও প্লাবিত হচ্ছে। এখনও মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেনি, তবে প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।”
ফুলগাজীর ইউএনও ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, “ইতোমধ্যে তিনটি বাঁধে ভাঙনের তথ্য পাওয়া গেছে এবং শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে। তাদের জন্য শুকনো ও রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।”
সতর্কতা ও বরাদ্দ
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, দুর্গতদের জন্য ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম। পাশাপাশি উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নতুন করে আরও বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন।
---
প্রসঙ্গত, ফেনী জেলার এই বন্যা পরিস্থিতি পুরো অঞ্চলের জনজীবনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। প্রয়োজনীয় দ্রুত সহায়তা না পেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
---
0 মন্তব্যসমূহ