✏অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:১০, ৩১মে ২০২৫
প্রযুক্তি খাতে সদ্য স্নাতকদের জন্য চাকরির সুযোগ আগের তুলনায় অনেকটাই কমে গেছে। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নবীন পেশাজীবীদের (ফ্রেশার) নিয়োগের হার গত পাঁচ বছরে ৫০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এই পরিবর্তনের প্রধান কারণ হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) দ্রুত অগ্রগতিকে চিহ্নিত করেছেন, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মপ্রবাহ ও মানবসম্পদের চাহিদায় আমূল পরিবর্তন এনেছে।
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম 'সিগন্যাল ফায়ার'-এর গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৯ সালের পর থেকে বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এন্ট্রি-লেভেল পজিশনে নতুনদের নিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে ৫০% এরও বেশি। আগে যেসব কোম্পানিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে নবীন স্নাতকদের হার ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ, এখন সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ৭ শতাংশে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তন কোনো সাময়িক মন্দার ফল নয়, বরং এটি AI-এর দ্বারা চালিত একটি দীর্ঘমেয়াদি রূপান্তরের প্রতিফলন। অনেক জুনিয়র লেভেলের কাজ এখন AI সহজেই করতে পারে, ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো আর অতটা নতুন কর্মী নিয়োগ করছে না।
লিংকডইনের সিনিয়র কর্মকর্তা অনিশ রামান বলেন, "যেসব কাজ একসময় নবীনরা করতেন, এখন AI সেই কাজগুলোর বড় একটা অংশ করছে। ফলে নতুনদের জন্য প্রবেশদ্বার অনেকটাই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।"
মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, "আমাদের কোম্পানিতে AI এখন একজন মিড-লেভেল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের মতো দক্ষভাবে কাজ করতে পারে। এক বছরের মধ্যেই AI বড় বড় প্রকল্পের কোডিংয়ের প্রায় পুরোটাই সম্পন্ন করতে পারবে।"
গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই জানিয়েছেন, কোম্পানির নতুন কোডের ৩০% এর বেশি এখন AI দিয়েই লেখা হচ্ছে। অন্যদিকে, মাইক্রোসফট প্রধান সত্য নাদেলা জানিয়েছেন, তাদের অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু সফটওয়্যার প্রকল্প এখন পুরোপুরি AI দ্বারা পরিচালিত।
তবে প্রযুক্তি খাতে চাকরির সংখ্যা একেবারে কমে যাচ্ছে না। চলতি বছর প্রযুক্তি খাতে প্রায় ৬০ লাখ কর্মসংস্থান রয়েছে, এবং ধারণা করা হচ্ছে ২০৩৪ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৭০ লাখে পৌঁছাবে। কিন্তু ভিন্নতা হচ্ছে চাকরির ধরনে—এখন আর সাধারণ সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট জ্ঞান যথেষ্ট নয়, বরং AI-সংক্রান্ত দক্ষতা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি চাওয়া হচ্ছে।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৮৭% কোম্পানি এখন AI-সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থী খুঁজছে। এমনকি চারটি চাকরির বিজ্ঞাপনের মধ্যে প্রায় একটিতে AI স্কিল বাধ্যতামূলক হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
চাকরির বাজারে AI-এর প্রভাব এখন স্পষ্ট। আগের মতো শুধুমাত্র স্নাতক ডিগ্রি ও সাধারণ কোডিং দক্ষতা নিয়ে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। এখনকার চাহিদা অনুযায়ী, যারা মেশিন লার্নিং, প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেটা অ্যানালাইসিস ও AI টুল ব্যবহারে পারদর্শী, তারাই ভবিষ্যতের চাকরি বাজারে এগিয়ে থাকবে।
0 মন্তব্যসমূহ