Header Ads Widget

দৌলতদিয়ায় বালু উত্তোলন ও পরিবহন যেন মৃত্যুর ফাঁদ, নিরব প্রশাসন!

 ✏সোহেল রানা,গোয়ালন্দ 

রাজবাড়ী সার্কেল | প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ১২:২১


এখনও মাটি থেকে শুকায়নি মৃত্যু আফিয়ার তাজাঁ রক্তের দাগ। সন্তানহারা মায়ের চোখের জল। স্বজনের আহাজারি। বিচার পায়নি নিহত আফিয়ার পরিবার। 

এক প্রকার সেই রক্তের উপর দিয়ে আবারও শুরু হয়েছে, বালু উত্তোলন ও পরিবহন। জ্বি শুনতে খানিটা অবাক লাগলেও, এমনি এক হৃদয় বিতরক ঘটনা ঘটেছে দৌলতদিয়া ৭নং ফেরীঘাট সংলগ্ন সাত্তার মেম্বার পাড়া এলাকায়। এই গ্রামের মোঃ আয়জাল বেপারীর স্কুল পড়ুয়া মেয়ে আফিয়া। গত বছরের এই সময়ে অদক্ষ চালকের বেপরোয়া গতির বালুবাহী ট্রাক চাপায় মৃত্যু হয় আফিয়ার। এই ঘটনার পর থেকে এই গ্রামের মধ্যে দিয়ে বালুবাহী ট্রাক পরিবহন বন্ধ থাকলে,সম্পতি তা আবার চালু হয়েছে। এতে আফিয়ার মত মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে শতাধিক শিশুর। এছাড়াও মারাত্মক নদী ভাঙান কবলে প্রায় ৫'শতাধিক পরিবারের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। ভাঙ্গন ঝুঁকিতে একটি সরকারী প্রাথমিক স্কুল ও বেশকিছু সরকারী স্থাপনা। একদিকে ভয়াবহ নদী ভাঙন অন্যদিকে বালু উত্তোলন ও পরিবহন। এই দুইয়ে মিলে যেন মৃত্যুর ফাঁদ, দৌলতদিয়া ৭ন ফেরীঘাট। 


স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের লাখো মানুষ ভয়াবহ নদী ভাঙনের স্বীকার। এই নদী ভাঙন রোধে সরকারের নেই কোন পদক্ষেপ। অথচ প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে নানা তাল বাহানায় নদীর পাড় থেকে চলে বালু উত্তোলন ও পরিবহন।


আবজাল সেখ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন,কিছুদিন আগে একটি প্রভাবশালী মহল স্থানীয় প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এখান থেকে বালু উত্তোলন,পরিবহন ও বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মাঝখানে কিছুদিন বন্ধ ছিল। এখন আবার নতুন কৌশলে বালু উত্তোলন চলছে।


মেছের খাঁ নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, বালুবাহী ট্রাক চাপায় এই গ্রামের একজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যেকোন সময় আবার ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। আমরা এই গ্রামের মধ্য দিয়ে বালুবাহী ট্রাক চলাচল করতে দিব না। প্রয়োজনে মানববন্ধন করব।


জানা যায়, দৌলতদিয়ার ৭নং ফেরীঘাট সংলগ্ন পদ্মা নদীর পাড় থেকে বালু উত্তোলনের জন্য রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক অন্তর নামে এক ব্যবসায়ীকে প্রায় ৪৭ লাখ টাকায় নিলাম দিয়েছেন। তিনি প্রতিদিন ১টি ভেকু মেশিন (খনন যন্ত্র) ও ২৫ থেকে ৩০টি ড্রাম ট্রাকের মাধ্যমে বালু উত্তোলন ও পরিবহন করে বিক্রি করছে। এবিষয়ে অন্তর বলেন, আমি স্থানীয় সরকারের নিকট হতে নিলামে নিয়ে বালু উত্তোলন করছি। প্রশ্ন করা হয়েছিলে, গ্রামের মধ্যে দিয়ে বালুবাহী ট্রাক চলাচল করার অনুমতি আছে কি?না। এমন প্রশ্নের কোন জবাব দেননি তিনি। 


তবে এই বালু নিলাম নিয়ে ভিন্ন মতামত দিয়েছেন সুশিল সমাজের ব্যক্তিরা। তারা বলছেন, স্থানীয় সরকারের কি? এমন প্রয়োজন ছিলো, একটি গ্রামের শিশুদের জীবন বিপন্ন করে ও হাজারো মানুষকে নদী ভাঙনের মুখে ঠেলে দিয়ে সরকারের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে সামান্য কিছু রাজস্ব জমা করা। 


এবিষয়ে অবশ্য দায়সারা বক্তব্য দিয়েছেন গোয়ালন্দ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদুর রহমান। বলেন, নিলামের চুক্তিতে বলা আছে নিলামপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজ দায়িত্বে বালু স্থল ও নৌ পথে পরিবহন করতে পারবে। কিন্তু গ্রামের মধ্যে দিয়ে বালু পরিবহন করতে পারবে কিনা? সেবিষয়ে কিছুই জানা নেই, এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদুর রহমান। বলেন, উপরে কথা বলে জানতে হবে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ