আজ ৫ আগস্ট—বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবময় ও যুগান্তকারী দিন। ঠিক এক বছর আগে, ২০২৪ সালের এই দিনে, ৩৬ দিনের টানা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন ঘটে দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার। এদিন রাজধানী ঢাকায় অভূতপূর্ব জনতার ঢলে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। ইতিহাসের পাতায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়—‘বাংলাদেশ টু পয়েন্ট ও’ নামে।
ছাত্র নেতৃত্বাধীন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ডাকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ রূপ নেয় সর্বস্তরের জনতার গণজাগরণে। শিক্ষক, চাকরিজীবী, শহীদ পরিবার, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষ শামিল হয় এই আন্দোলনে। সর্বশেষ দিনে গণভবন ঘিরে জনসমুদ্রে রূপ নেয় রাজধানী, আর তার মাঝেই আসে এক নাটকীয় খবর—দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা।
‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বললেও...
দেশজুড়ে যখন মানুষ বিজয়ের স্বপ্ন দেখছে, তখন প্রবল ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রী, যার মুখে একদিন উচ্চারিত হয়েছিল “শেখ হাসিনা পালায় না”—তিনিই বোন শেখ রেহানাসহ এমআই-১৭ হেলিকপ্টারে গোপনে পাড়ি জমান বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে। পরে সেখান থেকে সি-১৩০ হারকিউলিস উড়োজাহাজে করে ভারতের গাজিয়াবাদের হিন্দোন ঘাঁটিতে আশ্রয় নেন।
সেনাপ্রধানের ভাষণে নিশ্চিত হয় স্বৈরাচারের পতন
বিকেল ৩টা। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি শেখ হাসিনার দেশত্যাগের সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং জানান, অস্থায়ী সরকার গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। শুরু হবে দায়ীদের বিচারের প্রক্রিয়া।
বিজয়ের উল্লাস, রক্তের মূল্যেই অর্জন
গণভবন, সংসদ ভবনসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে বিজয়ের উল্লাস। কেউ লাল-সবুজের পতাকা হাতে, কেউবা কপালে লাল কাপড় বেঁধে আনন্দ প্রকাশ করেন। কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন, কেউ কৃতজ্ঞতায় আদায় করেন সিজদা। টিএসসি, শাহবাগসহ রাজধানীজুড়ে চলে আনন্দ মিছিল।
তবে এ বিজয়ের মিছিলে লেগেছিল রক্তের দাগ। ঢাকার যাত্রাবাড়িতে পুলিশি গুলিতে সেদিনই প্রাণ হারান অন্তত ৫৫ জন। আশুলিয়ায় পুড়িয়ে মারা হয় ৬ জন আন্দোলনকারীকে। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় চলে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নতুন প্রত্যাশা
সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নির্ধারণে বৈঠক হয় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। উপস্থিত ছিলেন সেনাপ্রধান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা এবং বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
জুলাইয়ের ১ তারিখে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ৩৬ দিনের মাথায় এক ঐতিহাসিক বিজয়ের মাধ্যমে শেষ হয়। গণতন্ত্র, অধিকার এবং বৈষম্যহীন এক বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর এ প্রজন্ম দেখিয়েছে, ৭১ না দেখলেও তারা গড়তে জানে নতুন এক স্বাধীন বাংলাদেশ।
---
0 মন্তব্যসমূহ